একজন আলোর ফেরিওয়ালা কাজী ইমদাদুল হক খোকন। ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। সমাজের অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে এসেছেন। বিনিময়ে চান না কিছুই। শুধু সমাজকে বদলাতে চান। সমাজকে আলোকিত করতে সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বইয়ের আলো। এ পর্যন্ত ৫0০টির বেশি পাঠাগারে, ৩০ হাজারের বেশি, আনুমানিক ২৫ লক্ষ টাকার বই উপহার পাঠিয়েছেন। তিনি একজন আলোর দিশারি। এমনকি বুকশেলফ তৈরি, পাঠাগার বিষয়ক প্রোগ্রাম, আরো অনেক ভালো কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ওনার প্রশংসার ভাষা লিখতে গিয়ে ভাবনায় পড়তে হয়, ক্ষুদ্রজ্ঞানের আমাকে থেমে যেতে হয়।
সৃষ্টিকর্তা ভালোবেসে অতি যত্নে সৃষ্টির সময় কিছু বিশেষ গুণ দিয়ে দেয় গোটা কয়েক মানুষের মাঝে। যার জন্য সেই মানুষগুলো লক্ষ মানুষের ভিড়েও সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন তাঁদের নিজস্ব স্বকীয়তায়, তেমনি অতুলনীয় আমাদের সবার প্রিয় কাজী ইমদাদুল হক খোকন। তিনি আমাদের মাঝে চির বিস্ময়, আমরা চিরকৃতজ্ঞ। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যক্তিগত পাঠাগারে বই পাওয়ার উৎসবের ধুম লেগেছে। পাঠকদের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। এ যেন আলোর চেয়েও ভীষণ আলোর রুপ নিয়েছে। তাঁর দ্বারা নেক কাজ সাধিত হচ্ছে।
ফিলিপ সিডনি বলেছেন, “যারা প্রকৃত প্রশংসার যোগ্য তাদের প্রশংসা করতে পারাও আনন্দের ব্যাপার”
তিনি আমাদের সবার শ্রদ্ধার ও ভালোবাসার বইপাগল একজন বোকা মানুষ। যিনি অসংখ্য পাঠাগারের অভিভাবক, বইপ্রেমী। পাঠাগারকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন, মুখে হাসি ফোটাতে সদা প্রস্তুত। তিমির বিদারী অরুণ, বিস্ময়কর এই মানুষটি পরম আত্মীয় হয়ে উঠেছেন।এই নিবেদিত প্রাণ মানুষটির পৃথিবীসম আয়ু হোক।
সারা বাংলাদেশের ভালোবাসায় আকণ্ঠ ডুবে থাকা, পাঠাগারের কল্যাণে নীরবে কাজ করে যাওয়া একজন মানুষ। এর চেয়ে পরিতৃপ্তির আর কী হতে পারে! একেকজন একেকভাবে জীবন উপভোগ করেন। তিনি প্রতিদিন প্রতিমূহুর্তে মূল্যবান বইগুলো প্রতিনিয়ত পাঠিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করছেন। প্রতিনিয়ত জয়ের আনন্দে ভাসছেন, আবার অপরদিকে অন্যদেরকে পাওয়ার আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই তিনি জীবনের গল্পটা সাজিয়ে তুলছেন নিপুণভাবে। ওনার গল্পটা সব পাঠাগারের হৃদয়ের দেয়ালে খোদাই করা থাকবে। খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া এটি একটি মহাকাব্যিক গল্প।
আন্তরিকতা ও সহযোগিতার কী অসম্ভব ক্ষমতা যা উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। তিনি স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন সত্যি করে সামনে ধরিয়ে দিয়ে সুন্দর সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছেন। বইয়ের সাথে সখ্যতা ও উচ্চমার্গের চিন্তা চেতনা বা দর্শন তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে হাজার কোটি বছর। আমার নিজের জ্ঞান স্বল্পতার কারণে ওনার মতো মানুষের অকৃপণ ভালোবাসার প্রশংসা সঠিকভাবে করতে পারছি না। তবে সব পাঠাগারে ওনার নামে একটি বুক কর্ণার তৈরি করা সময়ের দাবি।
আহমদ ছফা লিখেছেন, “এ সমাজে কিছু করতে গেলে দীর্ঘ দম থাকা উচিত।” দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর দম থাকা মানুষটির নাম কাজী ইমদাদুল হক খোকন। বর্তমান সমাজে দীর্ঘ দম থাকা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এই কমের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কিছু সংখ্যক মানুষ সত্যিকার অর্থে ভীষণ ভালো মানুষ। আলোর পথে, ভালোর পথে নিজের সবকিছু দিয়ে দিতে চান, মানবসেবায় বিভিন্নভাবে নিয়োজিত থাকেন। এই মানুষদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। অন্যের জন্য ইতিবাচক কিছু করতে পেরে এই মানুষগুলোর মন আনন্দিত হয়। মানুষের মনের অসংখ্য দরজা। অনেকে ঢুকে, অনেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটি- মনের কোনো দরজা দিয়ে বের হবে না কোনোদিন। এদেশের ব্যক্তিগত পাঠাগার তাঁর ঋণ শোধ করতে পারবে না। প্রশংসা করা খুব সহজ কাজ। এটাতেও আমরা কার্পণ্য করে থাকি। প্রশংসা একজন মানুষকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে। প্রশংসা সম্পর্ক মজবুত করে। ওনার প্রশংসা করার ভাষা আমার জানা নেই। ওনার প্রাণশক্তি ও মনোবল দেখে আমি মুগ্ধ ও অভিভূত। এই মানুষটি স্বপ্ন বিলিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাদের পৃথিবী থমকে গেছে, স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে, দুনিয়ার চমকে ধমকে হারিয়ে যাচ্ছে, এই গুণী মানুষটির কর্মকাণ্ড স্বপ্নের পথে এগিয়ে নেবে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি এই কাজটি নীরবে নিভৃতে করে যাচ্ছেন।
নিজের মনের আনন্দে বই উপহার পাঠান। এই সেই আনন্দ যা অন্যের হৃদয়কে সমানভাবে স্পর্শ করে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন, যা একটি সুন্দর পরিশীলিত সমাজ গড়ে তোলে।
নতুন বইয়ের ঘ্রাণ কতটা সুগন্ধময় সেটা আমি জানি। সব ভালো বই পড়ে শেষ করা যাবে না এক জীবনে। ছোট্ট এই জীবনে বই পড়ার সময়টা কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউব। নেশার জগত থেকে দূরে রাখতে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। পরিকল্পনা তো অনেক থাকে। সবকিছু বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তবুও স্বপ্নের পথে হাঁটি মোরা, কাজ করি দিবানিশি।তাঁর মত গুণীজনের জন্যই আজকের পৃথিবী এতটা রঙিন, এতটা মসৃণ, এতটা সুন্দর।
পাঠাগার হাসপাতালের চেয়ে কম উপকারী নয়, পাঠাগার হচ্ছে মনের হাসপাতাল। পাঠাগারকে শিক্ষার বাতিঘর বলা হয়। বই পড়ার যে আনন্দ তা মানুষের মনে জাগ্রত করে তুলতে পাঠাগারের ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
আলোর মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ, তিনি বেঁচে থাকবেন সব পাঠাগারের বইয়ের মাঝে সুগন্ধি ফুল হয়ে।
বই ও পাঠাগার প্রেমী এই মানুষটি একজন প্রচারবিমুখ আলোকিত মানুষ। নিজে আলোকিত হয়ে অন্যদের আলোকিত করতে চাওয়া একজন গুণী মানুষ। ব্যতিক্রমী নেশা, সারা দেশে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে বই উপহার পাঠান নিজ খরচে। বিশাল হৃদয়ের একজন মানুষ, ওনার গুণের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। বই চাওয়া মাত্র দু-তিন দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেন। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অগণিত পাঠাগারে বই উপহার পাঠিয়েছেন। অনেক পাঠাগার ওনার দেওয়া বই পেয়ে নিবন্ধন করেছেন। স্যালুট জানাই এই কর্মবীরকে।
অসীম জ্ঞানের ভান্ডার হলো বই। আর সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো পাঠাগার। শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য নয়, মনের খোরাক বই। বই মানুষের ক্লান্ত বিষন্ন মনকে প্রফুল্ল করে। জ্ঞান প্রসারে রুচিবোধ জাগিয়ে তোলে। প্রতিটি সমাজে যেমন উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল দরকার, তেমনি পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজকে বইমুখী করতে বই উপহার পাঠান পাঠাগারে। সভ্যতার মশাল হাতে কাজ করে যাচ্ছন। তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি সভ্য সমাজের।
লিখেছেন মেহেনাজ পারভীন , দিনাজপুর সদর, দিনাজপুর