তার গল্পটা শুরু আরও অনেক আগ থেকে। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি দরিদ্র পরিবারের জিয়াউল হক। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বুঝতেন শিক্ষার কদর। নেমে পড়েন দুধ বিক্রিতে। পরিশ্রমের মজুরি থেকে এলাকার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দিতেন শিক্ষার আলো ছড়ানো মানুষটির। গড়ে তুলেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার। যেখানে এখন বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার।
মাথায় করে দই ফেরি করে, সেই বিক্রির টাকায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজ সেবা করে চলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। দারিদ্রের কারণে প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি। তাই অন্যের মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে গড়ে তুলেছেন ১৪ হাজার বইয়ের এক পাঠাগার। তাঁর স্লোগান হয়ে উঠেছে ‘বেচি দই, কিনি বই’। সাদামনের এই মানুষটি পেয়েছেন একুশে পদক।
এরপর দই বিক্রির টাকা জমিয়ে ১৯৬৯ সালে নিজ ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন পাঠাগার। পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা ১৪ হাজার। তিনি শুরুর দিকে অভাবগ্রস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান করতেন। বর্ষ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসতেন। পরে স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, কোরআন ও এতিমদের পোশাক, শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখেন। ঈদে দুস্থদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করছেন।
বই বিলিয়ে বিদ্যালয়ে পড়তে না পারার বেদনা ভুলতে চেয়েছেন জিয়াউল হক। গরিব ছাত্রদের মধ্যে বই বিলি শুরু করেন। যত দিন পর্যন্ত সরকার বই বিনা মূল্যে দেওয়া শুরু করেনি, তত দিন পর্যন্ত বই দিতে থাকেন। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের বই দিতে থাকেন জিয়াউল। তাঁর দেওয়া বই পড়ে ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি করছেন। জিয়াউল হক আমাদের অনুপ্রেরণা। বই এবং পাঠাগারের প্রতি তার এই ভালবাসা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।