২০১৮ সাল থেকে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্য রেশমি স্থানীয় নজরুল ইসলাম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বছর থেকে সে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্য। এই শিক্ষার্থী জানান, আমি লাইব্রেরি সম্পর্কে কিছুই জানতামনা, আমার তেমন কোনো ধারণা ছিলনা। কিন্তু একদিন সহপাঠীদের সাথে এই পাঠাগারে প্রবেশ করার পর একসাথে হাজারো বই দেখে নিজের মধ্যে এক ধরণের অনুভূতি তৈরি হয়। সেই অনুভূতি থেকে আমি পাঠাগারের সদস্য হই এবং বইয়ের সাথে আমার একটি সাঁকো তৈরি হয়। রেশমি জানান ” এই পাঠাগার আমাকে পাঠক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হাজারো বইয়ের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।
পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক নবম শ্রেণির ছাত্রী কানিছ ফাতেমা জানান, পাঠাগারটি সত্যিকার অর্থে অন্ধকারে আলোর প্রদীপ। কারণ এটির মাধ্যমে আমরা আলোর সন্ধান পেয়েছি। কানিছ ফাতেমা জানান” আমাদের এখানে পাঠ্যবই ছাড়া সহসা অন্যকোনো বইয়ের দেখা মেলতোনা, মানুষের মাঝে ঐ রুচিবোধও ছিলনা, এখানে দৈনিক পত্রিকা পড়া ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। এই পাঠাগারের ফলে আজ আমরা হাজারো বইয়ের দেখা পেয়েছি। ইচ্ছেমতো নিজের পছন্দের বইটি পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। বাড়িতেও বই নিয়ে যেতে পারি স্বাধীনভাবে। এখানে বসেই আমরা দৈনিক পত্রিকা পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের পাঠাগারে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।
পাঠাগারের আরেক সদস্য রফিক উদ্দিন জানান, আমরা প্রথমে পাঠাগারটির গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। শুরুতে আমাদের তেমন আগ্রহও ছিলনা। কিন্তু এখানে কয়েকদিন আসা শুরু করলাম, সমসাময়িক বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করলাম, তখন গুণীজনদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে পাঠাগারের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করি। দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানান, আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম, পাঠাগারে এসে আমরা নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছি। বই আমাদেরকে আলো দেখিয়েছে। বই যে সাঁকো তৈরি করে দেয়, সেটা এই পাঠাগারে এসে অনুভব উপলদ্ধি করতে পেরেছি।
পাঠাগারের পাঠক তানজিনা আকতার জানান, উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী আমাদের এলাকার জন্য একটি আলোকিত বাতিঘর। গ্রামের সব শিক্ষার্থী , শিক্ষক ও বইপ্রেমী মানুষের জন্য এটি জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নিরিবিলি প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও জানান, পাঠকের তুলনায় গ্রন্থাগারে এখনো বইয়ের সংখ্যা কম। তিনি আরো বলেন, অন্য দশটি গ্রন্থাগারের চেয়ে আমাদের গ্রন্থাগারে পাঠকের উপস্থিতি অনেক বেশি। তবে চাহিদার তুলনায় বই কম।
নিয়মিত পাঠক সাকিব হোসাইন জানান, নিরিবিলি বইপাঠের জন্য উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এটি এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে। এই পাঠাগারটি আমাদের ইউনিয়নের এক গর্বের প্রতিষ্ঠান। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী করা, এলাকায় জ্ঞানের আলোর বিস্তার এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখছে।